কর্মসংস্থানের সংকট ও উত্তরণের উপায়
এমন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা উচিত যাতে করে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠি তৈরি হয়।
অর্থাৎ তারা কারিগরি ও বৃত্তিমুলক শিক্ষা ব্যবস্থাকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।
তাই বেকারত্ব দূরীকরণে দেশে ব্যাপকহারে কল-কারখানা স্থাপন ও বিনিয়োগের
সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে। দেশে ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা
প্রতিষ্ঠা করা না যায় তাহলে শিল্প কল-কারখানা প্রতিষ্ঠা বিনিয়োগ উৎপাদন
বাধাগ্রস্ত হবে। আমাদের বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত বেকার যুব-সমাজ রয়েছে। আর এ
তরুণ যুব সমাজই পারে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। এজন্য ব্যাপক কর্মসংস্থান
সৃষ্টি করে তরুণ বেকারদের বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করে তাদের কাজে
লাগাতে হবে। সরকারকে অবশ্যই বেকারত্ব দূরীকরণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে
হবে।
স্বাধীনতার চার দশকে বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও অনেক সমস্যা এখনও বিদ্যমান। বলা যায় সমস্যায় জর্জরিত জনজীবন। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় অন্যতম সমস্যা হচ্ছে বেকার বা বেকারত্ব। সাধারণ অর্থে বেকার বলতে বুঝায় যার কোন কাজ নাই। কর্মহীন মানুষ মাত্রই বেকার। যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও কর্মজগতে প্রবেশ করতে না পারায় বেকার। অর্থাৎ একজন নাগরিক যখন তার সকল যোগ্যতা প্রয়োগ করেও যখন ও কোন চাকুরী বা কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় তখন তাকে সাধারণত বেকার বলে। তৃতীয় বিশ্বে দেশগুলোর মধ্যে একজন নাগরিকের কর্মহীন বেকারত্ব জীবন মানেই কর্মক্ষেত্রে তার দক্ষতা বা সৃজনশীলতা বিকাশে প্রধান অন্তরায়।
দুনিয়ার সব রাষ্ট্রেই কম-বেশি বেকার রয়েছে। তাই উন্নত রাষ্ট্রগুলোয় নির্বাচনপূর্বক বেকারত্ব বা কর্মসংস্থানের সমস্যাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। বিগত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন প্রাক্কালে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দায় যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি শক্তিধর রাষ্ট্রেও ওবামাকে বেকার সমস্যা চিন্তিত করেছিল। বলা যায় নির্বাচন প্রাক্কালে আমেরিকায় বেকার সমস্যা ছিল বারাক ওবামার কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও ভোটে জয়লাভের পর এ বেকার সমস্যা অনেকটা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়। বেকারত্ব কমতে থাকে। আমাদের দেশেও নির্বাচনপূর্বক প্রতিটি রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে বেকার সমস্যা সমাধানের আশ্বাসও দেয়। বর্তমান সরকার বেকারত্ব দূরীকরণ বা বেকার সমস্যা সমাধানে কিছু পাইলট প্রকল্প হাতে নিলেও তেমন কিছু না হলেও কিছুটা উপকৃত হন স্বল্প সংখ্যক বেকার যুবকরা। আসলে এ সমস্যা সমাধানে গুটি কয়েক জেলা নয় এজন্য প্রয়োজন ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি সারা বাংলাদেশে। সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা বেকারত্ব দূর করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। ইতিমধ্যে গ্রামের অনেক বেকার যুবক বিদেশে কাজ করতে ইচ্ছুক কিন্তু অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে যেতে পারছে না। অথবা জমা-জমি বিক্রি করে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে বিদেশে গমন করলেও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অবৈধ ভিসা বা দালালদের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে বিভিন্ন দেশে গিয়ে প্রয়োজনীয় বৈধ কাগজ-পত্র না থাকায় তারা বিপদে পড়ে সেদেশে জেল খাটতেও বাধ্য হয়। সেক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগে স্বল্প খরচে বৈধ বা সরকারীভাবে বিদেশে গমনের ব্যবস্থা সরকারের একটি ভাল উদ্যোগ হলেও কোটি বেকারের মধ্যে এটি একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। তবুও আমরা আশাবাদী সরকারের এ উদ্যোগ বা ধারা অব্যাহত থাকলে বেকারত্ব দূরীকরনে এটি একসময় কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
আমাদের দেশে বেকারত্ব একটি প্রধান সমস্যা। এটি দেশটির জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম প্রতিবন্ধক। দেশে শিক্ষিত অর্ধ শিক্ষিত-অশিক্ষিত সব মিলিয়ে তিন কোটির অধিক বেকার রয়েছে। এ বিপুল সংখ্যক বেকারত্ব রেখে দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব নয়। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, স্বাধীনতার চার দশকে বাংলাদেশ বেশ কিছু ক্ষেত্রে এগিয়েছে বিশেষ করে শিক্ষা। শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে এগিয়েছে প্রতিবছর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছে সে তুলনায় তাদের কর্মসংস্থান হচ্ছে না। ফলে প্রতিবছরই আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। আর দেশের চাকরির অবস্থাও ভাল নেই। যোগ্যতা আছে অথচ অর্থের অভাবে চাকরি হচ্ছে না অনেকের। প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে টিকলেও অর্থ ও অসহযোগিতার কারণে যখন একজন শিক্ষিত যুবকের চাকুরী হয় না তখন সে স্বাভাবিকভাবে মানসিক কষ্ট পায়। এভাবে বার বার চাকরি ক্ষেত্রে হোচট খেয়ে অবশেষে সে সম্ভানাময় জীবন নষ্ট হওয়ার পথে চলে যায়। সন্ত্রাসী মাস্তানী, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং সহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। আবার প্রতিবছর যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেহারে কর্মসংস্থান না হওয়ায় বেকারত্বও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের কর্মমূখী শিক্ষার যথেষ্ট সুযোগ না থাকায় বেকার সমস্যার একটি কারণ। কারিগরি দিক থেকে জ্ঞানের যথেষ্ট অভাবের কারণে বিদেশে দক্ষ শ্রমিক যোগান দেওয়া সম্ভব হয় না। তাছাড়া যে কোন দেশের উন্নয়নে প্রধান শর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর নির্ভর করে দেশের অর্থনৈতিক, বিনিয়োগ, শিল্প কলকারাখানা স্থাপন, উৎপাদন বৃদ্ধি ইত্যাদি। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও দেশের রাজনৈতিক ঐক্য, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকায় বিদেশি বিনিয়োগ ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে, পর্যাপ্ত কল-কারখানা গড়ে না উঠায় দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না ফলে বেকারত্বের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের মত দেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কমে যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে সামাজিক অস্থিরতা যেমন বেড়ে যাবে তেমনি বেকারত্বও দূর করা কঠিন হয়ে পড়বে। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারগুলোর কোনো দুরদর্শীতা বা সঠিক পরিকল্পনা নেই। কিভাবে কোন পদ্ধতিতে দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায় সেব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐক্যমত ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার নেই। এসব কারণে ও বেকার সমস্যা প্রকট রূপ নিয়েছে। তাছাড়া লোকসানের কারণে দেশে স্থাপিত উৎপাদনশীল বিভিন্ন কল-কারখানা বিগত এক দশকে অনেক গুলো বন্ধ হয়ে গেছে।
উন্নত রাষ্ট্রগুলোতেও বেকার সমস্যা রয়েছে। তাই বলে চাকরি লাভে ব্যর্থ হয়ে তারা ভবঘুরে জীবন যাপন বা হতাশ হয় না। সেক্ষেত্রে তারা নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতায় স্ব-উদ্যোগে নানা স্বাধীন পেশার দ্বারা জীবন যাপন করে। তাছাড়া বেকার যুবক ও বৃদ্ধদের সরকারিভাবে ভাতার ব্যবস্থা ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন দেশগুলোতে থাকলেও আমাদের মতো তৃতীয় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তা সম্ভব নয়। আমাদের দেশে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে এক ধরনের আত্মসম্মান বোধ কাজ করে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে যদি কোথাও চাকরি না পায় তাহলে তাদের জীবনে হতাশা নেমে আসে। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে বাঁচার জন্য কি শুধুমাত্র চাকরিই প্রয়োজন। আর কোন পথ কি তাদের সামনে খোলা নেই। আমাদের দেশের শিক্ষিত যুবকরা তাই মনে করে এটা তাদের ভ্রান্ত ধারণা। সরকারি-বেসরকারি বা অন্য কোন চাকরি না হলেই সব শেষ হয়ে গেল এমন ধারণা মুছে ফেলা দরকার। আগেই উল্লেখ করেছি তাদের মধ্যে সামাজিক আত্মসম্মান কাজ করে। আত্মসম্মানবোধ অবশ্যই থাকবে। তাই বলে চাকরি না পেয়ে অন্য কোন স্বাধীন পেশা গ্রহণ না করে বেকার জীবন যাপন করাই কি উত্তম কাজ? প্রয়োজনে স্বাধীন কোন ব্যবসা করা যেতে পারে। অলসভাবে বসে না থেকে কিছু অর্থ ইনভেস্ট করে মৎস্য চাষ গবাদি পশু পালন, দুগ্ধ খামার বা অন্য যে কোন পেশা গ্রহণ করা যেতে পারে। আমাদের সবারই মনে রাখা উচিত বৈধভাবে যে কোন পেশা থেকে অর্থ উপার্জন কোন অসম্মানজনক কাজ নয়। বরং এতে আত্মমর্যাদা বা আত্মসম্মান কমবে না বরং বাড়বে। তাই শুধু চাকরির পিছে না দৌড়ে বা চাকরি নির্ভর না হয়ে যুব সমাজকে স্ব-উদ্যোগে আত্ম-কর্মসংস্থানমূলক কাজে জড়িয়ে পড়লে বেকারত্ব অনেকাংশে কমবে বলে আমরা আশা রাখি। কারণ প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে বেকারত্ব। শিক্ষা জীবন শেষ করেও চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না গেলেও মোটা অঙ্কের ঘুষ, অন্যদিকে আবার অভিজ্ঞতা না থাকা নিয়োগে-অনিয়ম, দুর্নীতি বিভিন্ন কারণে যখন শিক্ষিত তরুন সমাজ বিভ্রান্ত তখন স্ব-উদ্যোগ ছাড়া তো কোন উপায় নেই।
সরকারি বেসরকারি চাকরিতে বয়স না বাড়িয়ে বরং কমানো উচিত। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি। চাকুরীতে প্রবেশের বয়স ঠিক রেখে একজন ব্যক্তি ৩০-৩৫ বছর চাকরি করার কোন দরকার নেই। এক্ষেত্রে এক ব্যক্তি চাকরিতে প্রবেশের অর্থাৎ যোগদানের তারিখ থেকে সর্বোচ্চ চাকরির বিধান রাখা উচিত ২০-২৫ বছর। এতে করে দেশের শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অনেকাংশে কমে আসবে। ২০-২৫ বছর চাকরি করার পর অবসর গ্রহণের ফলে যে শূন্য পদের সৃষ্টি হবে তা পূরণ করবে যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষিত যুবক বা তরুন সমাজ। অবসরের টাকা দিয়েই ঐ ব্যক্তি স্বাধীন কোন ব্যবসা করে পরবর্তী জীবন নির্বাহ করতে তার বয়সের দিক থেকে কোন সমস্যা হবে না। গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক বা বিভিন্ন এনজিওতে এ ধরনের নিয়ম রয়েছে। প্রচলিত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষকদের মতো তাদের ৩০-৩৫ বছর চাকরি করতে হয় না। এক হিসাবে দেখা গেছে প্রতিবছরে কর্ম বাজারে প্রবেশ করে প্রায় ৩০ লাখেরও বেশি শিক্ষিত তরুন। চাকরি হয় মাত্র কিছু সংখ্যক শিক্ষিত তরুনের। তাই অনেক শিক্ষাবিদ মনে করেন, এমন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা উচিত যাতে করে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠি তৈরি হয়।
অর্থাৎ তারা কারিগরি ও বৃত্তিমুলক শিক্ষা ব্যবস্থাকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই বেকারত্ব দূরীকরণে দেশে ব্যাপকহারে কল-কারখানা স্থাপন ও বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে। দেশে ঐক্যমতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা না যায় তাহলে শিল্প কল-কারখানা প্রতিষ্ঠা বিনিয়োগ উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে। আমাদের বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত বেকার যুব-সমাজ রয়েছে। আর এ তরুণ যুব সমাজই পারে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। এজন্য ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে তরুন বেকারদের বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করে তাদের কাজে লাগাতে হবে। সরকারকে অবশ্যই বেকারত্ব দূরীকরণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। লেখাটি একটু উপকার হলেও শেয়ার করতে ভুলবেন না।""""""""""
স্বাধীনতার চার দশকে বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও অনেক সমস্যা এখনও বিদ্যমান। বলা যায় সমস্যায় জর্জরিত জনজীবন। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় অন্যতম সমস্যা হচ্ছে বেকার বা বেকারত্ব। সাধারণ অর্থে বেকার বলতে বুঝায় যার কোন কাজ নাই। কর্মহীন মানুষ মাত্রই বেকার। যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও কর্মজগতে প্রবেশ করতে না পারায় বেকার। অর্থাৎ একজন নাগরিক যখন তার সকল যোগ্যতা প্রয়োগ করেও যখন ও কোন চাকুরী বা কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় তখন তাকে সাধারণত বেকার বলে। তৃতীয় বিশ্বে দেশগুলোর মধ্যে একজন নাগরিকের কর্মহীন বেকারত্ব জীবন মানেই কর্মক্ষেত্রে তার দক্ষতা বা সৃজনশীলতা বিকাশে প্রধান অন্তরায়।
দুনিয়ার সব রাষ্ট্রেই কম-বেশি বেকার রয়েছে। তাই উন্নত রাষ্ট্রগুলোয় নির্বাচনপূর্বক বেকারত্ব বা কর্মসংস্থানের সমস্যাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। বিগত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন প্রাক্কালে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দায় যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি শক্তিধর রাষ্ট্রেও ওবামাকে বেকার সমস্যা চিন্তিত করেছিল। বলা যায় নির্বাচন প্রাক্কালে আমেরিকায় বেকার সমস্যা ছিল বারাক ওবামার কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও ভোটে জয়লাভের পর এ বেকার সমস্যা অনেকটা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়। বেকারত্ব কমতে থাকে। আমাদের দেশেও নির্বাচনপূর্বক প্রতিটি রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে বেকার সমস্যা সমাধানের আশ্বাসও দেয়। বর্তমান সরকার বেকারত্ব দূরীকরণ বা বেকার সমস্যা সমাধানে কিছু পাইলট প্রকল্প হাতে নিলেও তেমন কিছু না হলেও কিছুটা উপকৃত হন স্বল্প সংখ্যক বেকার যুবকরা। আসলে এ সমস্যা সমাধানে গুটি কয়েক জেলা নয় এজন্য প্রয়োজন ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি সারা বাংলাদেশে। সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা বেকারত্ব দূর করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। ইতিমধ্যে গ্রামের অনেক বেকার যুবক বিদেশে কাজ করতে ইচ্ছুক কিন্তু অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে যেতে পারছে না। অথবা জমা-জমি বিক্রি করে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে বিদেশে গমন করলেও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অবৈধ ভিসা বা দালালদের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে বিভিন্ন দেশে গিয়ে প্রয়োজনীয় বৈধ কাগজ-পত্র না থাকায় তারা বিপদে পড়ে সেদেশে জেল খাটতেও বাধ্য হয়। সেক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগে স্বল্প খরচে বৈধ বা সরকারীভাবে বিদেশে গমনের ব্যবস্থা সরকারের একটি ভাল উদ্যোগ হলেও কোটি বেকারের মধ্যে এটি একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। তবুও আমরা আশাবাদী সরকারের এ উদ্যোগ বা ধারা অব্যাহত থাকলে বেকারত্ব দূরীকরনে এটি একসময় কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
আমাদের দেশে বেকারত্ব একটি প্রধান সমস্যা। এটি দেশটির জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম প্রতিবন্ধক। দেশে শিক্ষিত অর্ধ শিক্ষিত-অশিক্ষিত সব মিলিয়ে তিন কোটির অধিক বেকার রয়েছে। এ বিপুল সংখ্যক বেকারত্ব রেখে দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব নয়। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, স্বাধীনতার চার দশকে বাংলাদেশ বেশ কিছু ক্ষেত্রে এগিয়েছে বিশেষ করে শিক্ষা। শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে এগিয়েছে প্রতিবছর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছে সে তুলনায় তাদের কর্মসংস্থান হচ্ছে না। ফলে প্রতিবছরই আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। আর দেশের চাকরির অবস্থাও ভাল নেই। যোগ্যতা আছে অথচ অর্থের অভাবে চাকরি হচ্ছে না অনেকের। প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে টিকলেও অর্থ ও অসহযোগিতার কারণে যখন একজন শিক্ষিত যুবকের চাকুরী হয় না তখন সে স্বাভাবিকভাবে মানসিক কষ্ট পায়। এভাবে বার বার চাকরি ক্ষেত্রে হোচট খেয়ে অবশেষে সে সম্ভানাময় জীবন নষ্ট হওয়ার পথে চলে যায়। সন্ত্রাসী মাস্তানী, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং সহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। আবার প্রতিবছর যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেহারে কর্মসংস্থান না হওয়ায় বেকারত্বও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের কর্মমূখী শিক্ষার যথেষ্ট সুযোগ না থাকায় বেকার সমস্যার একটি কারণ। কারিগরি দিক থেকে জ্ঞানের যথেষ্ট অভাবের কারণে বিদেশে দক্ষ শ্রমিক যোগান দেওয়া সম্ভব হয় না। তাছাড়া যে কোন দেশের উন্নয়নে প্রধান শর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর নির্ভর করে দেশের অর্থনৈতিক, বিনিয়োগ, শিল্প কলকারাখানা স্থাপন, উৎপাদন বৃদ্ধি ইত্যাদি। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও দেশের রাজনৈতিক ঐক্য, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকায় বিদেশি বিনিয়োগ ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে, পর্যাপ্ত কল-কারখানা গড়ে না উঠায় দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না ফলে বেকারত্বের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের মত দেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কমে যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে সামাজিক অস্থিরতা যেমন বেড়ে যাবে তেমনি বেকারত্বও দূর করা কঠিন হয়ে পড়বে। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারগুলোর কোনো দুরদর্শীতা বা সঠিক পরিকল্পনা নেই। কিভাবে কোন পদ্ধতিতে দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায় সেব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐক্যমত ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার নেই। এসব কারণে ও বেকার সমস্যা প্রকট রূপ নিয়েছে। তাছাড়া লোকসানের কারণে দেশে স্থাপিত উৎপাদনশীল বিভিন্ন কল-কারখানা বিগত এক দশকে অনেক গুলো বন্ধ হয়ে গেছে।
উন্নত রাষ্ট্রগুলোতেও বেকার সমস্যা রয়েছে। তাই বলে চাকরি লাভে ব্যর্থ হয়ে তারা ভবঘুরে জীবন যাপন বা হতাশ হয় না। সেক্ষেত্রে তারা নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতায় স্ব-উদ্যোগে নানা স্বাধীন পেশার দ্বারা জীবন যাপন করে। তাছাড়া বেকার যুবক ও বৃদ্ধদের সরকারিভাবে ভাতার ব্যবস্থা ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন দেশগুলোতে থাকলেও আমাদের মতো তৃতীয় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তা সম্ভব নয়। আমাদের দেশে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে এক ধরনের আত্মসম্মান বোধ কাজ করে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে যদি কোথাও চাকরি না পায় তাহলে তাদের জীবনে হতাশা নেমে আসে। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে বাঁচার জন্য কি শুধুমাত্র চাকরিই প্রয়োজন। আর কোন পথ কি তাদের সামনে খোলা নেই। আমাদের দেশের শিক্ষিত যুবকরা তাই মনে করে এটা তাদের ভ্রান্ত ধারণা। সরকারি-বেসরকারি বা অন্য কোন চাকরি না হলেই সব শেষ হয়ে গেল এমন ধারণা মুছে ফেলা দরকার। আগেই উল্লেখ করেছি তাদের মধ্যে সামাজিক আত্মসম্মান কাজ করে। আত্মসম্মানবোধ অবশ্যই থাকবে। তাই বলে চাকরি না পেয়ে অন্য কোন স্বাধীন পেশা গ্রহণ না করে বেকার জীবন যাপন করাই কি উত্তম কাজ? প্রয়োজনে স্বাধীন কোন ব্যবসা করা যেতে পারে। অলসভাবে বসে না থেকে কিছু অর্থ ইনভেস্ট করে মৎস্য চাষ গবাদি পশু পালন, দুগ্ধ খামার বা অন্য যে কোন পেশা গ্রহণ করা যেতে পারে। আমাদের সবারই মনে রাখা উচিত বৈধভাবে যে কোন পেশা থেকে অর্থ উপার্জন কোন অসম্মানজনক কাজ নয়। বরং এতে আত্মমর্যাদা বা আত্মসম্মান কমবে না বরং বাড়বে। তাই শুধু চাকরির পিছে না দৌড়ে বা চাকরি নির্ভর না হয়ে যুব সমাজকে স্ব-উদ্যোগে আত্ম-কর্মসংস্থানমূলক কাজে জড়িয়ে পড়লে বেকারত্ব অনেকাংশে কমবে বলে আমরা আশা রাখি। কারণ প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে বেকারত্ব। শিক্ষা জীবন শেষ করেও চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না গেলেও মোটা অঙ্কের ঘুষ, অন্যদিকে আবার অভিজ্ঞতা না থাকা নিয়োগে-অনিয়ম, দুর্নীতি বিভিন্ন কারণে যখন শিক্ষিত তরুন সমাজ বিভ্রান্ত তখন স্ব-উদ্যোগ ছাড়া তো কোন উপায় নেই।
সরকারি বেসরকারি চাকরিতে বয়স না বাড়িয়ে বরং কমানো উচিত। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি। চাকুরীতে প্রবেশের বয়স ঠিক রেখে একজন ব্যক্তি ৩০-৩৫ বছর চাকরি করার কোন দরকার নেই। এক্ষেত্রে এক ব্যক্তি চাকরিতে প্রবেশের অর্থাৎ যোগদানের তারিখ থেকে সর্বোচ্চ চাকরির বিধান রাখা উচিত ২০-২৫ বছর। এতে করে দেশের শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অনেকাংশে কমে আসবে। ২০-২৫ বছর চাকরি করার পর অবসর গ্রহণের ফলে যে শূন্য পদের সৃষ্টি হবে তা পূরণ করবে যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষিত যুবক বা তরুন সমাজ। অবসরের টাকা দিয়েই ঐ ব্যক্তি স্বাধীন কোন ব্যবসা করে পরবর্তী জীবন নির্বাহ করতে তার বয়সের দিক থেকে কোন সমস্যা হবে না। গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক বা বিভিন্ন এনজিওতে এ ধরনের নিয়ম রয়েছে। প্রচলিত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষকদের মতো তাদের ৩০-৩৫ বছর চাকরি করতে হয় না। এক হিসাবে দেখা গেছে প্রতিবছরে কর্ম বাজারে প্রবেশ করে প্রায় ৩০ লাখেরও বেশি শিক্ষিত তরুন। চাকরি হয় মাত্র কিছু সংখ্যক শিক্ষিত তরুনের। তাই অনেক শিক্ষাবিদ মনে করেন, এমন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা উচিত যাতে করে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠি তৈরি হয়।
অর্থাৎ তারা কারিগরি ও বৃত্তিমুলক শিক্ষা ব্যবস্থাকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই বেকারত্ব দূরীকরণে দেশে ব্যাপকহারে কল-কারখানা স্থাপন ও বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে। দেশে ঐক্যমতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা না যায় তাহলে শিল্প কল-কারখানা প্রতিষ্ঠা বিনিয়োগ উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে। আমাদের বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত বেকার যুব-সমাজ রয়েছে। আর এ তরুণ যুব সমাজই পারে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। এজন্য ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে তরুন বেকারদের বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করে তাদের কাজে লাগাতে হবে। সরকারকে অবশ্যই বেকারত্ব দূরীকরণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। লেখাটি একটু উপকার হলেও শেয়ার করতে ভুলবেন না।""""""""""
লেখাটা পড়ে অনেক কিছু বুঝতে পারলাম ।
ReplyDelete